আপনার সম্পদে রয়েছে বঞ্চিতের অধিকার

জাকাত আদায়ের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে বাড়তি সওয়াব হাসিল হয়। এ মাসে জাকাত দিলে স্বাভাবিকভাবেই অন্য মাসের চেয়ে সত্তরগুণ বেশি সওয়াব মিলবে। জাকাত ইসলামের মূল স্তম্ভের একটি। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেনÑ সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয় (সূরা আল-হাশর)। অন্য এক আয়াতে তিনি এরশাদ করেনÑ তাদের (সম্পদশালীদের) ধন-সম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে (সূরা আল-জারিআত)। জাকাত আদায়ের দ্বারা মানুষের উপার্জিত সব সম্পদ পবিত্র হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনÑ ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত আদায় করে তার সম্পদ থেকে অনিষ্ট দূর হয়ে যায়।’ সংসারের প্রাত্যহিক খরচ শেষে যার মালিকানায় অন্যূন সাড়ে বাহান্ন হাজার টাকা বা সমমূল্যের অন্য কোনো জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে এবং এ সম্পদের ওপর এক বছর সময় অতিবাহিত হয়, তাকে ওই সম্পদের শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত আদায় করতে হবে। যারা জাকাত না দিয়ে সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখতে চায় তাদের উদ্দেশে আল্লাহতায়ালা বলেনÑ যারা সোনা বা রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন।

যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপালের পার্শ্বদেশ এবং পিঠে দাগ দেওয়া হবে সেদিন বলা হবেÑ এটাই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর (সূরা তওবা)। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল (স) বলেন, আল্লাহ যাকে ধনসম্পদ দান করেছেন সে যদি তার জাকাত আদায় না করে তা হলে কিয়ামতের দিন তা একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে, যার দুই চোখের ওপরে দুটি কালো চিহ্ন থাকবে। কিয়ামতের দিন সেটি ওই ব্যক্তির গলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশে কামড়াতে থাকবে এবং বলবেÑ আমিই তোমার সম্পদ, আমিই পুঞ্জীভূত ধন (বোখারি শরিফ)। পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল ইজ্জাত নামাজের পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন জাকাতকে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো দারিদ্র্য বিমোচন করা। এ কারণে জাকাত এমনভাবে আদায় করা দরকার, যেন তা দারিদ্র্য বিমোচনে যথার্থ ভূমিকা রাখে। নানাজনকে অল্প অল্প করে জাকাত না দিয়ে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার মতো কোনো ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, এতে জাকাতের উদ্দেশ্য অধিকমাত্রায় অর্জিত হয়। জাকাত হিসেবে নগদ অর্থ পেলেই গরিব-অসহায় মানুষরা বেশি খুশি হন। এতে তারা নিজেদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজটা করতে পারেন। নগদ অর্থ দিয়ে নিজেদের পছন্দ, চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী তারা পোশাক, খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। রমজানে সম্পদশালীরা গরিবদের জাকাত দিয়ে থাকেন। উভয়ের মধ্যে যেই লেনদেন হয় এতে করে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সে কারণেই রাসুল (স) বলেছেনÑ জাকাত হলো ইসলামের সেতু (মুসলিম)। জাকাত বঞ্চিত মানুষের অধিকার রক্ষায়, সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদি প্রত্যেক সম্পদশালীই যথাযথভাবে জাকাত আদায় করেন, তা হলে দেশে দরিদ্র মানুষ থাকবে না। সবার মাঝে সম্পদের সুষম বণ্টন হলে রাষ্ট্র এমনিতেই উন্নত হবে। রোজাসংক্রান্ত মাসআলা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হলে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে একজন গরিবকে দুবেলা খাবার খাওয়াতে হবে অথবা পৌনে দুই কেজি গমের মূল্য সদকা করতে হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন